টেস্টোস্টেরন পুরুষদের জন্য খুবই মূল্যবান একটি হরমোন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমতে থাকে। সাধারণত 30 বছরের পর থেকে প্রতিবছর টেস্টোস্টেরনের মাত্রা ১% করে কমতে থাকে। যেসব পুরুষের বয়স ৭০ বছরের আশেপাশে তাদের শরীরে এর মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়েও অর্ধেক কমে যায়। অনেকেই আছেন যারা বিভিন্ন ইনজেকশন অথবা ওষুধের মাধ্যমে টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ বাড়াতে চান। কিন্তু এর কারণে আপনি আরো নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। তাই আজকের আর্টিকেলে টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায় এবং কিভাবে প্রাকৃতিকভাবে টেস্টোস্টেরন হরমোন বাড়াতে পারবেন সেই সম্পর্কে আলোচনা করব চলুন জেনে নেই বিস্তারিত।
টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায়
অনেকেই আছেন যারা টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন রকমের ওষুধ এবং ইনজেকশন ব্যবহার করে থাকেন। এই ওষুধ এবং ইনজেকশন আপনাকে উপকারের থেকে ক্ষতি করে বেশি। সবচেয়ে ভালো হবে আপনি যদি প্রাকৃতিকভাবে এই টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধি করতে পারেন। এখন প্রশ্ন হল কিভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধি করা যাবে। টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির জন্য কিছু প্রাকৃতিক উপায় রয়েছে। চলুন সেগুলো নিয়ে আলোচনা করি:
সঠিক খাদ্যাভাস
টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির জন্য সঠিক খাদ্যাভাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এমন খাবার খাওয়া উচিত। প্রাকৃতিক খাবারের মাধ্যমে আপনি আপনার টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধি করতে পারবেন। এই খাবার গুলোর মধ্যে রয়েছে।
- মধু
- দুধ
- কলা
- মাছ
- মাংস
- কলিজা
- ঝিনুক
- ভিটামিন সি জাতীয় ফল
- বাদাম বা বীজ জাতীয় খাবার
- ডালিম
- আঙ্গুর
- বাঁধাকপি
- পালং শাক
- পিয়াজ
- রসুন
- ইত্যাদি
পর্যাপ্ত ঘুম
পর্যাপ্ত ঘুম টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে অপর্যাপ্ত ঘুম টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমিয়ে দেয়। তাই এর মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে প্রতিদিন কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমানো জরুরী।
নিয়মিত ব্যায়াম
প্রাকৃতিকভাবে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়ানোর সবচেয়ে শক্তিশালী উপায় হল নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করা। ভারী শরীরচর্চা যেমন দৌড়ানো, ভারী কিছু তোলা, পুশ আপ, ডেডলিফ্ট, বেঞ্চ প্রেস, এইরকম ব্যায়ামগুলো আপনার টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধিতে সবচেয়ে কার্যকরী উপায়।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
শরীরের অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা আপনার টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। তাই টেস্টোস্টেরনের মাত্রা ঠিক রাখতে হলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। নিয়মিত ব্যায়াম করুন। একজন ডায়েটেশিয়ানের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়েট করে শরীর কন্ট্রোলে আনুন। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখলে আপনার টেস্টোস্টেরন হরমোন বেড়ে যাবে।
রোদে থাকুন
টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধির জন্য শরীরে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন “ডি” এর প্রয়োজন আছে। এবং ভিটামিন “ডি” এর সর্বোত্তম উৎস হল রোদ। প্রতিদিন রোদে সময় কাটান। তাছাড়াও খাবারের ডায়েটে মাছ রাখতে পারেন। কারণ মাছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন “ডি” পাওয়া যায়। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন।
পর্যাপ্ত পানি পান
শরীরকে সবসময় হাইড্রেট রাখুন এবং নিয়মিত ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করুন। কারণ প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করলে আপনার শরীর সবসময় হাইড্রেট থাকবে এবং টেস্টোস্টেরনের মাত্রা সঠিক থাকবে।
স্ট্রেস কমানো
দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস টেস্টোস্টেরন হরমোন কমিয়ে দিতে পারে। স্ট্রেস কমাতে যোগব্যায়াম, ধ্যান বা অন্যান্য শিথিলকরণ কৌশলগুলি অনুশীলন করা যেতে পারে।স্ট্রেস কমানোর জন্য সব সময় হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করবেন তাহলে আপনার স্ট্রেস কমার পাশাপাশি হরমোন বৃদ্ধি পাবে।
ধুমপান ও অ্যালকোহল পরিহার
অতিরিক্ত পরিমাণ মধ্যপান করলে আপনার টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ কমে। পাশাপাশি ধূমপান করলে আরো বেশি ক্ষতি হয়। টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ বাড়াতে চাইলে ধূমপান এবং অ্যালকোহল সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করুন এবং স্বাস্থ্যকর ভাবে জীবনযাপন করুন।
আমাদের শেষকথা
মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো টেস্টোস্টেরন হরমোন। এই ব্যাপারে সবার সচেতন হওয়া উচিত। এই বিষয়টি নিয়ে সবার ভালোভাবে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আপনার টেস্টোস্টেরনের মাত্রা যদি উদ্বেগের কারণ হয় তবে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। তারা আপনার টেস্টোস্টেরন মাত্রা নির্ধারণ করতে একটি রক্ত পরীক্ষার পরামর্শ দিতে পারে এবং আপনার জন্য উপযুক্ত চিকিৎসার পরামর্শ দিতে পারে।। আশা করি আমাদের আজকের আর্টিকেলটি টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায় আপনাদের ভালো লেগেছে। এই বিষয় নিয়ে আর কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্টে জিজ্ঞেস করবেন। এতক্ষণ বিডি নলেজ ব্লগের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
সাধারণ প্রশ্নসমূহ
Testosterone হরমোন একটি পুরুষ হরমোন যা পুরুষের যৌনতা বিকাশ এবং প্রজনন ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে। এটি পেশি বৃদ্ধি, শক্তি বৃদ্ধি এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
Testosterone হরমোন বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্বাভাবিকভাবেই কমে যায়। তবে অন্যান্য কিছু কারণেও এই হরমোন কমতে পারে, যেমন: অতিরিক্ত ওজন, অনিয়মিত ঘু্ম, মানসিক চাপ, কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ, কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা, কিডনি রোগ, লিভার রোগ এবং হাইপোথাইরয়েডিজম ইত্যাদি।
কিছু ওষুধ এবং সাপ্লিমেন্ট টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে। তবে এই ওষুধ বা সাপ্লিমেন্টগুলি গ্রহণের আগে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির জন্য রক্ত পরীক্ষা করা যেতে পারে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
Very informative article, go ahead 🙂
Thanks