মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় প্রাকৃতিকভাবে

চেহারা আমাদের সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তোলে তাই আমাদের প্রয়োজন নিয়মিত ত্বকের পরিচর্যা করা। কমবেশি আমরা সকলেই মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে জানতে চাই। সুন্দর ও টানটান ত্বক কে না চায়? সাদাকালো যেমনই হোক কমবেশি সকলেই ত্বকে উজ্জ্বল করতে চায়। তাই না জেনে আমরা অনেক সময় কেমিক্যাল জাতীয় পণ্য ব্যবহার করে থাকি, যা আমাদের ত্বককে উজ্জ্বল করার পরিবর্তে আরো কালছে করে দেয়। অনেকেরই শরীরের ত্বকের তুলনায় মুখের উজ্জ্বলতা কম থাকে এটি আমাদের অসচেতনতার কারণে হয়ে থাকে। বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল জাতীয় পণ্য ব্যবহার ও নিয়মিত মেকআপ ব্যবহার করে সঠিকভাবে মেকআপ না তোলা এসব কারণে আস্তে আস্তে মুখের উজ্জ্বলতা হারায়। আবার অনেক সময় সানটানের কারণে ত্বক কালছে হয়ে যায়। সূর্য থেকে আগত ইউভি রশ্নি সরাসরি আমাদের ত্বকের ভিতর প্রবেশ করে, এতে আমাদের ত্বকের সানটান সৃষ্টি হয়, বলিরেখা দেখা দেয় এজন্য দরকার প্রতিদিন সানস্ক্রিন ব্যবহার করা। চলুন আজকের এই আর্টিকেলে মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে জেনে নেই।

মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায়
মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায়

নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার রাখা

মুখের ধুলোবালি, তেল, এবং ময়লা দূর করার জন্য নিয়মিত মুখ পরিষ্কার করা জরুরি। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। মুখের ত্বকে ধুলোবালি, তেল, ঘাম ইত্যাদি জমে গেলে ত্বক ম্লান হয়ে যায়। তাই দিনে দুইবার মুখ ভালো করে পরিষ্কার করুন। ত্বকের ধরন অনুযায়ী উপযুক্ত ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে হবে। আমরা অনেকেই নিয়মিত মেকআপ ব্যবহার করি, তবে ভালোভাবে পরিষ্কার করি না। তাই আমাদের মেকআপ ব্যবহারের পর মেকআপ তোলার ক্ষেত্রে ভালোভাবে সচেতন থাকতে হবে। প্রতিদিন মেকআপ ব্যবহারের পরে আমাদের ত্বক নষ্ট হয়ে যায় ব্রণ সৃষ্টি হয়।

টোনিং করা

ফেসওয়াশ করার পর টোনার ব্যবহার করুন। টোনার ত্বকের অতিরিক্ত তেল, ময়লা এবং মৃত কোষ দূর করে ত্বককে মসৃণ করে তোলে। ভালো ব্র্যান্ডের টোনিং নিয়মিত ব্যবহারের ফলে ত্বকের ময়লা পরিষ্কার হয়, বলি রেখা দূর হয়। টোনার ত্বকের গভীর থেকে ময়লা পরিষ্কার করে, পিএইচ ব্যালেন্স নিয়ন্ত্রণ করে।  অতিরিক্ত তেল কন্ট্রোল করে তাই ব্রনের প্রবণতা কমে যায়। এছাড়াও ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে।টোনার ব্যবহারের উপকার পাওয়ার জন্য ত্বকের ধরন অনুযায়ী টোনার নির্ধারণ করা প্রয়োজন। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এক ধরনের শুষ্ক ও মিশ্র ত্বকের জন্য এক ধরনের ব্যবহার করা ভালো।

  • তৈলাক্ত ত্বকের জন্য: তৈলাক্ত ত্বকের জন্য গ্লাইকোলিক, স্যালিসাইলিক যুক্ত টোনার গুলো ত্বক থেকে তেল শোষণ করতে উপকারী। ব্রণ দূর করে ও লোমকূপ সংকুচিত করে।
  • শুষ্ক ত্বকের জন্য: যেসব উপাদান ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখে সেইসব উপাদান যুক্ত টোনার বেছে নেওয়া উচিত। যেমন ভিটামিন ই, গ্লিসারিন, হায়ালুরনিক এসিড ইত্যাদ।
  • মিশ্র ত্বকের জন্য:  মিশ্র ত্বকের জন্য গ্লাইকোলিক, স্যালিসাইলিক, ভিটামিন ই, গ্লিসারিন, হায়ালুরনিক এসিড আলফা হাইড্রোক্সাইড, লেক্টিক এসিড জাতীয় টোনার বেছে নেওয়া উচিত।

সঠিক টোনার বেছে নেওয়ার জন্য অভিজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়াও ঘরোয়া উপায়ে টোনার তৈরি করে আপনি ব্যবহার করতে পারবেন।

  1. গ্রিন টি: কোয়াটার কাপ গ্রিন টির সাথে তিন থেকে চার ফোঁটা এসেনশিয়াল ওয়েল মিক্স করে টোনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।
  2. অ্যাপেল সিডার ভিনেগার: সমপরিমাণ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ও পানি মিশিয়ে সাথে মধু মিক্স করে টোনার তৈরি করুন। এটি তৈলাক্ত ত্বকের জন্য উপকারী।
  3. গোলাপ জল: গোলাপ জলের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে টোনার তৈরি করুন। যদি ত্বক শুষ্ক হয় তাহলে লেবুর রস ছাড়া শুধু গোলাপজল ত্বকে টোনার হিসেবে ব্যবহার করুন।
  4. নিয়মিত ফেস প্যাক ব্যবহার করা: ফেস প্যাক ত্বককে পুষ্টি দেয় এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।

নাক বন্ধ হলে করনীয় । নাকের সর্দি দূর করার উপায়

ময়েশ্চারাইজ করা

ত্বককে হাইড্রেটেড রাখতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। শুষ্ক ত্বক দ্রুত রুক্ষ হয়ে যায় এবং ম্লান হয়ে যায়। তাই ত্বকের ধরন অনুযায়ী উপযুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। ময়েশ্চারাইজার ত্বকের আদ্রতা হারিয়ে যাওয়া ফিরিয়ে আনে, কোমলতা ধরে রাখে, ত্বকের খসখসে ভাব দূর করে, বয়সে চাপ পড়তে দেয় না ও মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে তাই নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।

সিরাম

সিরাম ত্বকে উজ্জ্বল কারে ও আর্দ্রতা ধরে রাখে। নিয়মিত ত্বকের যত্নে সিরামের ব্যবহার অপরিহার্য। মুখের উজ্জ্বলতায় চিকিৎসকরা নিয়মিত সিরাম ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সিরাম ব্যবহারের ফলে ত্বককে ভিতর থেকে সতেজ দেখায়। ত্বক টানটান হয় ও বয়সের চাপ দূর হয়। তবে ত্বকের ধরন বুঝে সিরাম কিনতে হবে এবং নিয়ম অনুযায়ী ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। তাই মুখের উজ্জ্বলতায় সিরামের গুরুত্ব অনেক।

মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায়
মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সিরাম

সানস্ক্রিন

আমাদের ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করে সানস্ক্রিন। শীত গরম সব মৌসুমে সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মি আমাদের ত্বকের ভিতরে প্রবেশ করে ত্বকের কোলাজেন কমিয়ে দেয়। এতে সানটান দেখা দেয়। ত্বক কুচকে যায়ও বলিরেখা হয়। সানস্ক্রিন কেনার আগে সঠিক ভাবে যাচাই করে কিনুন। বাইরে বের হবার আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। এছাড়াও প্রতিদিন সানস্ক্রিন ব্যবহার করে সূর্য থেকে ত্বককে রক্ষা করলে ক্যান্সারের হাত থেকে ত্বককে রক্ষা করা যায়।

অপুষ্টি ও অতিপুষ্টির শারীরিক লক্ষণ গুলো জানুন

ত্বককে হাইড্রেট রাখা

ত্বককে হাইড্রেটেড রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। ত্বককে হাইড্রেট রাখলে এটি নরম এবং কোমল থাকে। পানি শরীর থেকে টক্সিন দূর করে ত্বককে উজ্জ্বল করে তোলে। তাই নিয়মিত প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন এতে আপনার ত্বক সতেজ থাকে।

স্বাস্থ্যকর খাবার

ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য সুষম খাদ্য গ্রহণ করা জরুরি। প্রচুর ফল, শাকসবজি, এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার খান। স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ত্বকের জন্য ভালো। এতে ত্বক সুস্থ থাকে এবং উজ্জ্বল দেখায়।

পর্যাপ্ত ঘুম

পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে। পর্যাপ্ত ঘুম ত্বকের কোষের পুনরুজ্জীবনে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন ৭-৮ ঘন্টা ঘুম নিন।

মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে কিছু ঘরোয়া উপায়

মুখের উজ্জ্বলতা বাড়াতে কিছু ঘরোয়া উপায়ও রয়েছে। এর মধ্যে কিছু উপায় হল:

  • হলুদ এবং টকদই মিশিয়ে মুখে লাগান। হলুদের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। টকদই ত্বককে মসৃণ করে তোলে।
  • লেবুর রসে ভিটামিন সি রয়েছে, যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। লেবুর রসের সাথে চিনি বা মধু মিশিয়ে ফেস প্যাক তৈরি করে মুখের ত্বকে লাগান।
  • টমেটোর রসে রয়েছে লাইকোপিন। লাইকোপিন উপাদানটি ত্বকের ট্যান দূর করে, উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। তাই নিয়মিত ত্বকে টমেটো রস ব্যবহারের চেষ্টা করুন। টমেটোর রস ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং ত্বকের দাগ-ছোপ দূর করে।
  • মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে নিয়মিত বেসন এবং মধু মিশিয়ে পেক তৈরি করে মুখে ব্যবহার করুন। বেসন ত্বক পরিষ্কার করে এবং মধু ত্বককে নরম করে তোলে।
  • নিয়মিত অ্যালোভেরা জেল মুখে লাগান। অ্যালোভেরা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং ত্বককে উজ্জ্বল করে তোলে।
  • মধু ত্বকের জন্য ভালো। মধু ত্বককে নরম এবং কোমল করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।

লিভারে চর্বি কমানোর উপায় জেনে নিন

সর্তকতা

  • ধূমপান এবং অ্যালকোহল পান থেকে বিরত থাকুন। ধূমপান এবং অ্যালকোহল পান ত্বকের ক্ষতি করে ত্বককে ম্লান করে তোলে।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন। ব্যায়াম শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং ত্বককে উজ্জ্বল করে তোলে।
  • মানসিক চাপ কমাতে চেষ্টা করুন। মানসিক চাপ ত্বকের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই মানসিক চাপ কমাতে চেষ্টা করুন।
  • সূর্য থেকে সুরক্ষা: সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি ত্বকের উজ্জ্বলতা কমিয়ে দেয়। তাই নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করে ত্বককে সূর্য থেকে রক্ষা করুন

চোখের নিচের কালো দাগ দূর করার উপায়

আমাদের শেষকথা

নিয়মিত ত্বকের যত্ন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করলে মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে। অনেকেই আছে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্রিম অথবা লোশন ব্যবহার করে। এসব প্রোডাক্ট আপনার ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি করে। আপনি যদি প্রাকৃতিক উপায়ে অথবা খাবারের মাধ্যমে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে চাইলে আমাদের নিয়মগুলি ফলো করতে পারেন। আজকের আর্টিকেলে আমরা মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি। এই বিষয় নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জিজ্ঞেস করবেন। এতক্ষণ বিডি নলেজ ব্লগের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

bdknowledge.com

আমরা পেশাদারী ব্লগার। অনলাইনের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান নিয়ে ব্লগ লিখে থাকি, বিডি নলেজ এই ওয়েবসাইটে আমরা ই সেবা সংক্রান্ত এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করেছি, আমরা বিডি নলেজ টিম।

2 thoughts on “মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় প্রাকৃতিকভাবে”

Leave a Comment