ত্বকের এলার্জি দূর করার উপায়

ত্বকের সৌন্দর্য মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম অবস্থায় ত্বকের সমস্যাগুলো সবাই খুব সাধারণ ভাবে নেয় কিন্ত আস্তে আস্তে যখন এটি ভয়ংকর রূপ নেয় তখন মানুষ ত্বকের সমস্যা নিয়ে সিরিয়াস হয়। ত্বকের এলার্জি বিষয়টা খুবই সাধারণ মনে হলেও ভবিষ্যতে এটা খুবই খারাপ অবস্থার তৈরী করে। আজকে আপনাদের সাথে ত্বকের এলার্জি দূর করার উপায় এবং আপনার ত্বকে কোন ধরনের অ্যালার্জি রয়েছে সেই সম্পর্কিত তথ্য নিয়ে আলোচনা করবো। চলুন জেনে নেই বিস্তারিত।

ত্বকের এলার্জি দূর করার উপায়

ত্বকের এলার্জি কি

অনেক কারণে ত্বকে এলার্জি হতে পারে। এটি ত্বকের বাহ্যিক সৌন্দর্য নষ্ট করে। এছাড়াও নানা রকম সমস্যা সৃষ্টি করে। এটি ইমিউন সিস্টেমের প্রতিক্রিয়ার কারণে ঘটে। ফলে আমরা ত্বকে চুলকানি, ফুসকুড়ি ও জ্বালা অনুভব করি যার কারণে ত্বকে ক্ষত সৃষ্ট হয়, দাগ হয়, ত্বক লাল হয়ে যায় এমনকি ফোলাভাব দেখা দেয়। ত্বকের এলার্জি হলে সারাক্ষণ চুলকানি একটি অস্বস্থিকর অনুভুতি সৃষ্টি করে।

কেনো ত্বকে এলার্জির হয়

এলার্জি কেনো হয় তা জানা থাকলে এই সমস্যার দ্রুত সমাধান বের করা যায় এবং এলার্জি সৃষ্ট হওয়া থেকে আটকানো যায়। কিছু কিছু সময় কসমেটিকস গহনা বা পারফিউমের ধাতুর ব্যবহারের কারণে হয়। গরমে ঘামের কারণে গহনা ত্বকে এলার্জি তৈরী করতে পারে। অনেকের নিকেল বা সোনার গহনায় এলার্জি রয়েছে। কিছু কিছু খাদ্যের কারণে ও অপরিষ্কারের কারণে এলার্জি সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য করণ হলোঃ

  • ধুলোবালি
  • পোকামাকড়ের কারণ
  • পোষা প্রাণী থেকে
  • কোনো ওসুধের কারণে
  • কিছু উদ্ভিদের সংস্পর্শে আসলে
  • কসমেটিক ব্যবহারের কারণে
  • চুলের কালারের জন্য ব্যবহৃত কোবাল্ট ক্লোরাইড, শেম্পু, নেইল পালিশ ইত্যাদিতে ব্যবহৃত কোয়াটারনিয়াম 15” নামক পদার্থ ত্বকে এলার্জি সৃষ্টি করে।

ত্বকের এলার্জির ধরণ

এলার্জি নানা ধরনের হয়ে থাকে। ত্বকে এলার্জি এর মধ্যে একটি অন্যতম সমস্যা। কম বেশি সকলের এই সমস্যায় ভুগতে দেখা যায়। ত্বকের এলার্জি কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেক মারাত্মক রুপ ধারণ করে। আজকে আমরা ত্বকের অ্যালার্জির বিভিন্ন ধরন সম্পর্কে আলোচন করবো।

লাইকেন প্লানাস এলার্জি

এই এলার্জি শরীরের বিভিন্ন অংশে হয়ে থাকে। তবে আমরা সচারচর পায়ের গোড়ালিতে, হাতের কব্জি, ঘাড়ে, পিঠে ও পায়ের নিচে বেশি দেখতে পাই। এই এলার্জি অত্যান্ত বিরক্তিকর। মাঝে মাঝে মাথার ত্বকে ও নখে এটি দেখা যায়। লাইকেন প্লানাস সাধারণত ফ্যামিলিগত সমস্যার কারণে দেখা যায়। এটি ত্বকে চকচকে দাগের সৃষ্টি করে।  সাধারণত ২০ থেকে ৬০ বছর বয়সী তরুণ বা বৃদ্ধাদের দেখা যায়। লাইকেন প্লানাস একটি বংশগত রোগ। আপনার পূর্বপুরুষ যদি এই সমস্যায় আক্রান্ত থাকে তাহলে আপনারও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৬০%।

ত্বকের এলার্জি দূর করার উপায়

দাদ এলার্জি

দাদ একটি দীর্ঘস্থায়ী ত্বকের এলার্জি। এটি গ্রানুলোমা অ্যানুলারে নামেও পরিচিত। এটি সাধারণত ছএাকের সংক্রমনে হয়। ত্বকে লাল ফুসকুড়ি সৃষ্টি করে। হাতে পায়ে ও পিঠে গোল আকৃতির ফুসকুড়ি দেখা যায়। সব বয়সের মধ্যেই এটি দেখা যায়। এটি একটি সংক্রমন রোগ। তাই আক্রন্ত স্থান সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। প্রতিদিনের ব্যবহৃত কাপড় ভালো ভাবে পরিষ্কার করতে হবে। অ্যান্টি ফাঙ্গাল জাতীয় ক্রিম ব্যবহার করে এটি নিরাময় করা সম্ভব।

ত্বকের এলার্জি দূর করার উপায়

একজিমা এলার্জি

একজিমা একটি খুব সাধারন ত্বকের এলার্জি। যার ফলে ত্বক ফুলে যায়, লাল হয়ে যায়, ত্বক খসখসে হয়ে যায় ও চুলকায়। অ্যাটোপিক একজিমার মধ্যে একটি অন্যতম রূপ। এটি সকল বয়সের মানুসেরই হয়ে থাকে। এটি একটি অসংক্রমক রোগ।

আমবাত ও এনজিওডিমা এলার্জি

শরীরের যেকোনো অংশে এই রোগ হতে পারে। তবে এটি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বেশির ভাগ সময় খুব তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যায়। আবার কিছু মানুষের জন্য দীর্ঘস্থায়ী হয়। এটি হলে ত্বকে ফুসকুড়ি দেখা দেয় আক্রান্ত স্থানে ফোলাভাব দেখা দেয়। অনেক কারণেই এটি হতে পারে। দীর্ঘ সময় ঠান্ডা, তাপ বা সূর্যের আলোর সংস্পর্শে থাকলে আমবাত হয়ে থাকে।

ত্বকে এলার্জির লক্ষণগুলো কি

ত্বকের এলার্জি হলে ত্বকের ফুসকুড়ি, চুলকানি, লাল ভাব সৃষ্ট হওয়া, জ্বালা করা, সুষ্ক হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা যায়। মাঝে মাঝে হালকা কাশি, শ্বাস নালীতে চুলকানি অনুভব হওয়া, শরীর ফুলে যাওয়া এগুলোও এলার্জির লক্ষন। এলার্জি মাঝে মাঝে খুব মারাত্মক রূপ নেয়। দ্রুত চিকিৎসা করা প্রয়োজন হয়ে পড়ে।

অপুষ্টি ও অতিপুষ্টির শারীরিক লক্ষণ গুলো জানুন

ত্বকের এলার্জির পরীক্ষা

বিভিন্ন সময় স্কিন পরীক্ষার মাধ্যমে এলার্জি নির্ধারণ করা হয়। স্কিন পরীক্ষা সকলের জন্য নিরাপদ। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা করা যায় যদি পরীক্ষা করা জরুরী হয়।
কিছু পরীক্ষার কথা উল্লেখ করা হলো

রক্ত পরীক্ষা- রক্তের নমুনা ল্যাবে পাঠানো হয়। সেখানে এলার্জি প্রচারকারী রাসায়নিক রক্তে মিশানো হয়। তারপর যেই অ্যান্টিবডি তৈরী হয় তা দেখে ফলাফল জানানো হয়।
যাদের স্কিন প্রিক টেষ্ট নেই তাদের রক্ত পরীক্ষা করানো হয়। আবার কিছু ক্ষেএে দুটো পরীক্ষা একসাথে করানো হয়।

প্যাচ পরীক্ষা- একজিমা শনাক্ত করতে এই পরীক্ষা করানো হয়। ত্বকে রাসায়নিক প্রয়োগ করে তিন থেকে চার দিন পর এর ফলাফল জানা যায়।

স্কিন পিক টেস্ট- এটি এলার্জি নির্ধারনের জন্য সাধারন একটি পরীক্ষা।  সাধারণত এই পরীক্ষায় কিছু তরল পদার্থ আপনার পিঠে রাখা হয়। এই তরলে এলার্জি সৃস্টি কারী পদার্থ থাকে। আপনার যদি এই তরলে এলার্জি থাকে তাহলে কিছুক্ষনের মধ্যেই এর প্রভাব আপনার ত্বকে দেখা দিবে।

কিছু কিছু সময় পরীক্ষার মাধ্যমেও এলার্জি নির্ধারণ করা যায় না অথবা সঠিক পরীক্ষাটি করা হয় না। আবার কোনো সময় এলার্জি ধরা পড়লেও এটি কতোটা গুরুতর তা বোঝা যায় না। তাই এই ব্যপারে সতর্ক থাকা জরুরী।

ত্বকে এলার্জির চিকিৎসা

এলার্জির পার্থক্য বিবেচনা করে চিকিৎসা নেওয়া হয়। তাই চিকিৎসকের কাছে এই চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন অনেক।

ছএাক সংক্রমন- ছএাকের সংক্রমনের কারণে যেই এলার্জি সৃষ্টি হয় তাদের অ্যান্টি ফাঙ্গাল চিকিৎসা করা যায়। দাদ এর মধ্যে অন্যতম। আক্রান্ত স্থানে অ্যান্টি ফাঙ্গাল ক্রিম ও কিছু ওসুধের মাধ্যমে এই রোগ দূর করা সম্ভব।

একজিমা ও ছএাক- বেশিরভাগ ত্বক বিশেষজ্ঞরা এই ধরনের এলার্জির জন্য ক্রিম প্রয়োগ করার পরামর্শ দেন। এটি সরাসরি ত্বকে প্রয়োগ করা হয়।  এলার্জির মাত্রা অনুযায়ী সাথে ওষুধ দেওয়া হয়।

এলার্জি নিয়ন্ত্রণের কিছু উপায়

  • প্রতিদিন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
  • হালকা গরম পানিতে গোসল করুন।
  • জামাকাপড় গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করুন।
  • গোসলে রাসায়নিক সাবানের ব্যবহার কম করুন।
  • পারফিউম ব্যবহার বন্ধ করুন।
  • টাইট পোশাক পড়া যাবে না। এমন পোশাক পরুন যেনো বাতাস চলাচল করতে পারে।
  • যে সব কারণে এলার্জি হয় তা থেকে দূরে থাকুন পশমী কাপড়, গহনা, নিকেল ইত্যাদি।
  • ধুলোবালি এড়িয়ে চলুন।
  • একটি অ্যান্টি-ইচ ক্রিম ব্যবহার করতে পারনে।

ঘরোয়াভাবে ত্বকের এলার্জি দূর করার উপায়

অ্যাপেল সিডার ভিনোগার: এটি এলার্জি দূর করতে সাহায্য করে। এটি একজিমা উপশম করে ও সংক্রমনের ঝুকি কমায়। দীর্ঘ দিনের ত্বকের এলার্জির জন্য অ্যাপেল সিডার ভিনেগার কার্যকরী।
গরম পানিতে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে গোসল করলে ত্বকের আর্দ্রতা পাওয়া যায় মসৃণ হয় ও এলার্জি থেকে উপশম হয়। অনেকে ভিনেগার যুক্ত ক্রিমও ব্যবহার করে থাকেন।

নারকেল তেল- এটি নানাভাবে এলার্জির জন্য উপকারী। একজিমার জন্য নারকেল তেল উপশম দেয় ও জ্বালা পোড়া কমায়। আবার অনেকের নারকেল তেলের কারণে এলার্জি হয়।

বেকিং সোডা- বেকিং সোডা ব্যবহারে ত্বকে এলার্জি দূর হয়। নিয়মিত ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

আমাদের শেষকথা

আপনারা নিশ্চই বুঝতে পেরেছেন কি কারনে আপনাদের এলার্জি হয়। এবং আপনার এলার্জির ধরনটা কি। ত্বকের এলার্জি দূর করার উপায় কি এই সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পেরেছেন। প্রথমে আপনাকে ত্বকের অ্যালার্জির ধরনটা বুঝতে হবে যে আপনার কোন ধরনের অ্যালার্জি হয়েছে। যদি তাও বুঝতে না পারেন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে পরিক্ষা করে নিন। আপনি সুস্থ থাকুন অপরকে সুস্থ রাখুন। ধন্যবাদ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য। বিষয়টই ভালো লাগলে এবং আপনি উপকৃত হলে আপনার বন্ধু এবং পরিবারের মধ্যে লেখাটি শেয়ার করবেন।

bdknowledge.com

আমরা পেশাদারী ব্লগার। অনলাইনের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান নিয়ে ব্লগ লিখে থাকি, বিডি নলেজ এই ওয়েবসাইটে আমরা ই সেবা সংক্রান্ত এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করেছি, আমরা বিডি নলেজ টিম।

Leave a Comment